Saturday, 16 August 2025

ব্রেকিং নিউজ:

চাকসু নিয়ে চবির ছাত্র সংগঠনগুলোর আকাশে কালো মেঘের শঙ্কা : নেই প্রশাসনের দৃশ্যমান তৎপরতা

ক্যাম্পাস August 5, 2025 81 views
চাকসু নিয়ে চবির ছাত্র সংগঠনগুলোর আকাশে কালো মেঘের শঙ্কা : নেই প্রশাসনের দৃশ্যমান তৎপরতা

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের দাবিতে যখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার দেওয়া হচ্ছে আশ্বাস। তবে নীতিমালা ও তফসিল ঘিরে নির্দিষ্ট সময়সূচি না থাকায় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট, আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি ও উদাসীনতা। এই পরিস্থিতিতে চাকসু নির্বাচন যেন হয়ে উঠেছে  সময়ের দাবি ।

সম্প্রতি তিনটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়—ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর—দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে নীরব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের বিষয়টি বারবার আলোচনায় এলেও তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মৌখিক আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেই সুযোগ তৈরি হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন চাকসুসহ  নানান দাবি-দাওয়া চিঠি আকারে কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে। এ নিয়ে ২ দফায় শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ও করেছে প্রশাসন। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর ছয় সদস্যের চাকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর বক্তব্যে উঠে এসেছে প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা ও প্রশ্ন । বিশ্ববিদ্যালয়  শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন,  " প্রশাসন নিজেদের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত  করে রাখতে চায় ,‌ এ কারণে তারা বিগত ৩৫ বছরে কোন নির্বাচন আয়োজন করে নাই । প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতের জন্য চাকসু  নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন , " এই প্রশাসনকে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাকসু  নির্বাচন দিতে হবে । "

 

এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চবি শাখার  সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া বলেন , " আমরা মনে করি, ছাত্রসংসদ গঠনতন্ত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেখানে সব ছাত্রসংগঠন, ক্লাব ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।" তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসন এখনো পর্যন্ত গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে কোনো আপডেট দেয়নি এবং দ্রুত তফসিল ঘোষণার আগে মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। "

বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক তাহসান হাবীব বলেন, "প্রশাসন আমাদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ডাকসু, জাকসু, রাকসুর তফসিল ঘোষিত হলেও চবির নির্বাচনের তারিখ এখনো অজানা। এটি প্রশাসনের গাফিলতি।"
 
ছাত্রদল চবি শাখার পক্ষ থেকেও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবি তোলা হয়েছে। সংগঠনটির মতে, প্রশাসন যদি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে, তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

 চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন জানান , " প্রশাসন দ্বিচারিতামূলক আচরণ করছে ‌। এই আচরণ মূলত শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রশ্ন ও স্বচ্ছতা থেকে দূরে থাকার একটি কৌশল। পূর্বের বৈঠকগুলোতে ছাত্রসংগঠনগুলোর যে দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হয়েছিল, তা সংশোধিত গঠনতন্ত্রে কতটা প্রতিফলিত হয়েছে তা নিয়ে বড় ধরনের অসন্তোষ আছে। বিশেষ করে, গঠনতন্ত্রে এমফিল, পিএইচডি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও বয়সসীমা সংক্রান্ত ধারা অনেককেই পক্ষপাতমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার আশঙ্কা জাগাচ্ছে। চাকসু ছাত্রদের অধিকার রক্ষার একটি প্ল্যাটফর্ম হওয়া উচিত, কিন্তু গঠনতন্ত্র এমনভাবে সংশোধিত হয়েছে, যা ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নয় বরং কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর আধিপত্য নিশ্চিত করতে পারে—এই ভয়টা অমূলক নয়।" 

৩০ জুলাই প্রশাসনিক ভবনের সামনে চাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের বক্তব্য: 'রোডম্যাপ নয়, এখন চাই তফসিল।'

মানববন্ধনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের ছাত্র আল মাশনূন  বলেন, " প্রশাসন আসলে নতুন বন্দোবস্ত চায় না , তারা পুরাতন ধারায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে । তিনি মনে করেন প্রশাসনের মধ্যে একটা শোষক শ্রেণীর মনোভাব চলে আসছে যে কারণেই তারা নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে ‌। তিনি আরো যোগ করেন , তাদের দাবি-দাওয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বয়স সংক্রান্ত এবং প্রার্থিতা সংক্রান্ত বিষয় যেখানে তারা বলেছিলেন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স মাস্টার্সের রানিং বা ফলাফল প্রকাশ হয়নি এমন  শিক্ষার্থীরাই চাকসু প্রার্থী হতে পারবে কিন্তু বাস্তবে নতুন গঠনতন্ত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এ নিয়ে তাদের মনে চাপা ক্ষোভ ও আশঙ্কা কাজ করছে যে নির্দিষ্ট কোন একটি গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন এমন কাজ করছে । তবে তাদের আশা বর্তমান প্রশাসন দ্রুততর সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শিক্ষার্থীদের উপহার দিবে ।


তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ এখনো জানেন না চাকসু আসলে কী এবং কীভাবে এটি তাদের উপকারে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অর্ঘ্য রায় (২১-২২ শিক্ষাবর্ষ )  চাকসুকে শুধুমাত্র একটি " ভাতের হোটেলের " সাথে তুলনা দিয়ে বলেন , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চাকসু ভবনের কোন কাজ নেই শুধুমাত্র এটি শিক্ষার্থীদের স্বল্প মূল্যে খাবার খাওয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয় ; কিন্তু এটি হওয়া উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মঞ্চ ‌। "

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের ভূমিকা তুলে ধরে ‘জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’-এর মুখপাত্র সৈয়ব আহমেদ সিয়াম বলেন, “এই প্রশাসনের কাছ থেকে আমাদের আশা ছিল, তারা দ্রুতই চাকসু নির্বাচন দেবে। কিন্তু আজও আমরা তফসিলের অপেক্ষায়। প্রশাসনের এই দুর্বলতা আমাদের ব্যথিত করেছে।”

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার জানান, "আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। এটি প্রক্রিয়াধীন।" তিনি আরও বলেন, উপ-উপাচার্যদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে চাকসু নীতিমালা তৈরি হয়েছে এবং এটি দ্রুতই প্রকাশ করা হবে।


এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, “৪ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসু নির্বাচনের নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।” 


১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর চবিতে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বরে ছাত্রনেতা ফারুকুজ্জামান খুন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে । তারপর দীর্ঘ ৩৫ বছরে এরশাদ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১২জন উপাচার্য পেলেও আর কোনো চাকসু নির্বাচন পায়নি চবি শিক্ষার্থীরা।  পুনরায় এই নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের মন্থরতা ছাত্রসমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

Comments ()

Please login to post a comment.

No comments yet. Be the first to comment!

Related News

ক্যাম্পাস ৪ দিন আগে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চতুর্থ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (১২ আগস্ট ২০২৫) বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, চবি শাখার উদ্যোগে ৪র্থ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ।

69
ক্যাম্পাস ৪ দিন আগে

চাকসুর সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে নাখোশ‌ : চবি ছাত্রদল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন এবং ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে শাখা ছাত্রদল।

47
ক্যাম্পাস ৪ দিন আগে

ইবি রিসার্চ সোসাইটির সভাপতি ওয়াসিফ, সম্পাদক রাফা

গবেষণায় আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে গঠিত 'ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) গবেষণা সংসদে'র ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ত্বকী ওয়াসিফ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফার্মেসি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইলমু কবির রাফা মনোনীত হয়েছে।

54
ক্যাম্পাস ৪ দিন আগে

নবীনদের পদচারণায় মুখরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন স্বপ্ন ও বুক ভরা আশা নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস । দীর্ঘ ১২ বছরের একনিষ্ট সাধনা ও কঠোর অধ্যবসায় শেষে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পদার্পণ করেছে তারা। এ অনুভূতি প্রত্যেকের কাছে নতুন স্বপ্ন আলিঙ্গনের মত।

43

সর্বশেষ খবর